ঢাকা , শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫ , ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের চিকিৎসা বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-০১ ২৩:০৩:৫৫
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের চিকিৎসা বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের চিকিৎসা বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ আগস্ট জুম’আ বার বিকাল ৫:৩০টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের চিকিৎসা বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এড. মোয়াযযম হোসাইন হেলাল ও এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব আবদুর রব ও জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন প্রমুখ। 


সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং-এ নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সুস্থ থাকা আল্লাহ তাআলার একটি বড় নিয়ামাত। এই সুস্থতার জন্য আল্লাহ তাআলা কিয়ামাতে আমাদের জিজ্ঞাসা করবেন। হায়াত ও মওত আল্লাহ তাআলার হাতে। আমরা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে সব সময় মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। আল্লাহ তাআলা যখন আমাদের নিতে চাইবেন, তার এক মিনিট আগেও নিবেন না, আবার এক মিনিট পরেও নিবেন না। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা-যখন নির্ধারিত সময় এসে যায়, তখন এক মুহূর্ত আগেও যায় না, আবার এক মুহূর্ত পরেও যায় না। ঠিক সময়ে আল্লাহ তাআলা নিয়ে যান। পবিত্র কুরআনে এসেছে- যখন আমরা অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাদের সুস্থ করেন।


তিনি আরও বলেন, ঈমানদার মানুষ মৃত্যুকে কখনো ভয় করে না। আমীরে জামায়াত বলেছেন, ‘আমাকে নেওয়ার যদি আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত হয়, সেটা বাংলাদেশ থেকে হলেও যেতে হবে, আবার বিদেশ থেকে হলেও যেতে হবে। অতএব, আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমি বাংলাদেশেই চিকিৎসা নেব।’ আল্লাহর প্রতি তাঁর এই ঈমান এবং আস্থা আমরা মনে করি একজন মু’মিন হিসেবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফীক দান করুন। দ্বিতীয় কথা তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাই, স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসক সমাজ মনে করবেন যে, বাংলাদেশের চিকিৎসকদের চাইতে বিদেশের চিকিৎসকগণ অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এমনটা ভাবা মোটেই ঠিক নয়।’


অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আমীরে জামায়াত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং যেভাবে তিনি অতীতে জাতির খেদমত করে চলেছিলেন, সেইভাবে আবার জাতির খেদমত করবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট দোয়া করি তিনি যেন তাঁকে দ্রুত সুস্থতার নিয়ামাত দান করেন। রাসূল সা. বলেছেন, দোয়া ইবাদাতের মস্তিষ্ক। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, দোয়ার মাধ্যমে মানুষের হায়াত পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 


তিনি বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের জনশক্তি এবং দেশবাসী সকলের নিকট সম্মানিত আমীরে জামায়াতের দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়ার আবেদন জানাই। সারা দুনিয়ায় যারা যেখানে আছেন তাদের নিকটও তাঁর রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা যেন আমীরে জামায়াতের অসুস্থতা দূর করে দেন এবং এমন সুস্থতা দান করেন যাতে তার আর কোনো অসুস্থতা না থাকে। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়া কবুল করুন আমীন। 


সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আপনারা সবাই জানেন এবং সারা দুনিয়ার মানুষ জানে গত ১৯ জুলাই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের জাতীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। আবার তিনি উঠলেন। আরেকটু কথা বলার সময় আবার তিনি পড়ে গেলেন। তারপর বসে তিনি বাকি বক্তব্য সমাপ্ত করলেন। সেদিন থেকে সবাই উনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেদিনের ঘটনার পর আমরা উনাকে একটি স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রাথমিকভাবে ডাক্তাররা ধারণা করেছিলেন প্রচন্ড রৌদ্রের তাপমাত্রার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিলো। ঐ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বড় ধরনের কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। বক্তব্যের সময় পড়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে উনার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সিরিয়াসলি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা সবকিছু চেকআপ করার চেষ্টা করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ জুলাই ইউনাইটেড হাসপাতালে উনার এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। আমরা ডাক্তারদের কাছে যেটা জানতে পেরেছি- হার্টের তিনটি প্রধান ব্লকেজ প্রথম দেখা যাচ্ছে। যেটা ৮০/৮৫ ভাগের মত ব্লকেজ। আরও কিছু ব্লকেজ আছে যেগুলো ৬০/৬৫% এর মত। এনজিওগ্রামে সব মিলিয়ে ৫/৬টি ব্লকেজ এর সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালার খাস মেহেরবানী এত ব্লকেজ থাকা সত্ত্বেও বক্তব্যের সময় পড়ে যাওয়ার পরও তিনি সুস্থতাবোধ করছেন। ডাক্তাররা উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আপনি কোন কষ্ট অনুভব করেন কিনা। জবাবে তিনি বললেন, না, আমি কোন চাপ বা কষ্ট অনুভব করি না। অথচ তার ব্লকেজগুলো জটিল। যদি রিং পড়াতে যায় তাহলে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। হিতে বিপরীত হতে পারে। এজন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হলো ওপেন হার্ট সার্জারি করে নেয়াই ভালো হবে এবং ডাক্তাররা এটাকেই নিরাপদ মনে করছেন। 


তিনি আরও বলেন, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, উনাকে ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে হবে। উনার পরিবার এবং উনি নিজেসহ সর্বসম্মতভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেহেতু ব্লকেজ এর পরিমাণটা বেশি এবং বয়সের দিকে চিন্তা করে দেশের বাইরে পাঠানো নিরাপদ। তার আপনজনরা পরামর্শ দিয়েছিলো এবং আমরাও বলেছিলাম। কিন্তু উনি সম্মতি দেননি। সম্মতি না দেয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উনি বলেছেন, কার্ডিয়াক চিকিৎসায় বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নত এবং দেশের ডাক্তারদের উপর তিনি আস্থা রাখেন। 


তিনি বলেন, আরেকটি কথা হলো- উনার মত দায়িত্বশীল ব্যক্তি, দলের প্রধান এবং জাতীয় নেতা হিসেবে কোটি কোটি মানুষের কাছে পরিচিত ও সম্মানিত। উনার চিকিৎসা দেশে না নিয়ে দেশে বাইরে চলে গেলে সাধারণ মানুষ মনে করবেন যে, আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বা ডাক্তারদের ব্যাপারে উনি কনফিডেন্স রাখেন না। সম্মানিত আমীরে জামায়াত বলেছেন, দেশের কর্ডিয়াক ডাক্তারদের উপর তাঁর আস্থা আছে। আমি দেশেই চিকিৎসা নিতে চাই।’ উনার এই সিদ্ধান্ত, মতামত ডাক্তাররা গ্রহণ করেছেন এবং আমাদের সংগঠনও আল্লাহর উপর ভরসা করে একমত হয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতলেই উনার অপারেশন হবে।


আপনারা সবাই জানেন, বাংলাদেশের একজন দেশসেরা কার্ডিয়াক সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের তত্ত্বাবধানে একটা টিমের অধীনে উনি চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উনাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা করি। অন্যান্য ব্যাপারে ডাক্তাররা বললেন স্বাস্থ্য ভালো আছে। অপারেশনের পূর্বের প্রস্তুতি ডাক্তাররা এখন গ্রহণ করছেন। 


তিনি বলেন, বহু ভিজিটার উনার সাথে দেখা করার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভিড় করছেন। দেশের রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ, আলেম উলামা এবং কেউ সরাসরি ভিজিটে আসছেন। টেলিফোনে প্রধান উপদেষ্টা, সরকারের অনেক উপদেষ্টা খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সেনাপ্রধানও টেলিফোনে খোঁজখবর নিয়েছেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত অনেক এ্যাম্বেসডর, হাইকমিশনাররাও উনার খোঁজখবর নিচ্ছেন, বিদেশ থেকেও ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে ডাক্তাররা অনুরোধ করছেন উনার চিকিৎসার সুবিধার্থে ভিজিটরদের আসা-যাওয়া, ফোন করা বন্ধ করতে হবে। ডাক্তারগণ উনার কাছে ভীড় না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে আমীরে জামায়াতের মোবাইল ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। উনার নিকট কোনো ভিজিটর না যাওয়ার ব্যাপারে তিনি সকলের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরাও সকল শুভাকাক্সক্ষীর নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি উনাকে ভিজিট না করার জন্য। আপনারা যার যার অবস্থান থেকে সম্মানিত আমীরে জামায়াতের দ্রুত সুস্থতার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করতে থাকুন নফল রোজা ও নফল সালাতের মাধ্যমে। আমরা আশা করছি তিনি দ্রুতই আল্লাহর মেহেরবাণীতে সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। তখন আমরা তাঁর সাথে দেখা করতে পারব ইনশাআল্লাহ। যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে উনার খোঁজ নিচ্ছেন, আরোগ্য কামনা করছেন আমরা তাদের সকলের নিকট আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রতি আপনাদের যে ভালবাসা তার জন্য আমরা চির ঋণী থাকব। সকল কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ তাআলার। রোগ ব্যাধি তাঁর পক্ষ থেকেই আসে, আবার তিনিই আরোগ্য দান করেন। তিনি বিরামহীনভাবে সারাদেশে ছুটে চলেছেন অক্লান্ত ও নিঃস্বার্থভাবে- এই মুখলিস বান্দাকে আল্লাহ তাআলা যেন দ্রুত সুস্থ করে দেশের জন্য, দ্বীনের জন্য, জাতির প্রয়োজনে, ইসলামী আন্দোলনের প্রয়োজনে নেক হায়াত দিয়ে কাজের সক্ষমতা দিয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন এই দোয়াই করি। 



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ